নির্ভরণ রেখা কী? নির্ভরণ রেখা নির্ণয় পদ্ধতি আলোচনা
ভূমিকা: নির্ভরণ শব্দটি দুটি পরাপর নির্ভরশীল চলকের সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ স্যাত ফ্রান্সিস গ্যান্টন বংশগতির ধারা বিশ্লেষণে নির্ভরণ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন।
নির্ভরণ রেখা: লেখচিত্র বা বিক্ষেপ চিত্রের সাহায্যে দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত চলকের মান ছক কাগজে উপস্থাপন করার জন্য যে রেখা ব্যবহার করা হয়, তাকে নির্ভরণ রেখা বলে। নির্দেশিত পথটির প্রকৃতি চলক দুটির সম্পর্কের ভিত্তিতে সরল বা বক্র হতে পারে । রেখা সরল হলে সমানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে এবং একে সরলরৈখিক সম্পর্ক বলে। চলক দুটির মধ্যে সম্পর্ক অসমানুপাতিক হলে রেখাটি বক্র হবে এবং সম্পর্ক টিকে বক্ররৈখিক সম্পর্ক বলা হয়।
নির্ভরণ রেখা বিপরীতমুখী চলকসমূহে গড় মানগুলোকে নির্দেশ করে। এ চলকদ্বয়কে যথাক্রমে x ও y নামে অভিহিত করা হয়। এদের একটি স্বাধীন চলক এবং অপরটি নির্ভরশীল চলক। x স্বাধীন চলক এবং y নির্ভরশীল চলক হলে এক্ষেত্রে পরিবর্তকের উপর y চলকের নির্ভরণ রেখা হবে। কিন্তু y চলক স্বাধীন এবং x নির্ভরশীল চলক হলে y চলকের উপর x চলকের নির্ভরণ রেখা হবে।
x চলকের উপর y চলাকের নির্ভরণ রেখার ক্ষেত্রে সমীকরণ হবে y=a1+b1x
আবার, y চলকের উপর x চলকের নির্ভরণ সমীকরণ হবে, x=a2 +b2y, যেখানে a1, a2, b1, b2 হলো ধ্রুবক।
পরিশেষে বলা যায় যে, নির্ভরণ রেখা একটি পরিবর্তনযুক্ত মানগুলোর বিপরীতে অপর পরিবর্তকের মানগুলোকে প্রদর্শন করে।
নির্ভরণ রেখা নির্ণয়ের পদ্ধতি আলোচনা কর।
নির্ভরণ রেখা নির্ণয় পদ্ধতি: দুটি পদ্ধতিতে নির্ভরণ রেখা নির্ণয় করা যায়। যথা- বিক্ষেপ চিত্র ও নূন্যতম বর্গপ্রক্রিয়া।
১. বিক্ষেপ চিত্র (Scatter Diagram): দুটি চলকের মধ্যকার সম্পর্ক যথার্থভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য বিক্ষেপ চিত্রকে প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে স্বাধীন চলককে ox অক্ষে ও নির্ভরশীল চলককে oy অক্ষে স্থাপন করা হয়। ছক কাগজে স্বাধীন চলক ও অধীন চলক উপস্থাপন করলে যদি সেটি সরল রেখার ন্যায় পথ নির্দেশ করে তাহলে বুঝতে হবে চলকগুলোর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় সম্বন্ধ বিদ্যমান। কিন্তু অর্থনৈতির ও বাণিজ্যিক নানাবিধ সমস্যার কারনে চলকদ্বয় পূর্ণমাত্রায় সম্বন্ধযুক্ত হয়না।বিক্ষেপ চিত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আঙ্কন করা হয় বলে অঙ্কনের সময় বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কতিপয় বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। যথা-
(ক) ছক কাগজে যেসব বিন্দু স্থাপন করা হবে সেগুলোর নিকটবর্তী স্থানে সরল রেখাটি হবে।
(খ) সরল রেখার দুই পাশে প্রায় সমসংখ্যক বিন্দু থাকবে।
(গ) সরল রেখার উভয়দিকে অবস্থিত বিন্দুগুলো সমান দূরত্বে অবস্থান করবে।
২. ন্যূনতম বর্গপ্রক্রিয়া: উনিশ শতকে ফরাসি গণিতবিদ মি. এনড্রিন লেগানড্রি ন্যূনতম বর্ণপ্রক্রিয়া প্রবর্তন করেন। বিক্ষেপ চিত্র চলকের সম্পর্ককে গাণিতিক উপায়ে উপস্থাপন করা যায় না। চলকসমূহের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সম্পর্ককে গাণিতিক উপায়ে উপস্থাপন করার জন্য ন্যূনতম বর্ণ প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন করা হয়। ন্যূনতম বর্গ প্রক্রিয়ার চলকসমূহের প্রতিটি বিন্দুর বিচ্যুতির বর্গের সমষ্টি সবচেযে ন্যূনতম মান গ্রহণ করে।এ প্রক্রিয়ায় সরল রেখা অঙ্কনে কতিপয় নিয়ম মেনে চলা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, নির্ভরণকে নির্ভরণ রেখার মাধ্যমে গাণিতিক উপায়ে উপস্থাপন করা যায়। এ জন্য বিশেষ নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

No comments:
Post a Comment